সিংগাপুর আসার কথা ভাবছেন? একটু থামুন এবং হিসেব মিলিয়ে নিন।
পাশের বাড়ির কেউ একজন সিঙ্গাপুর গিয়ে ভালো টাকা ইনকাম করছেন। শুরুর বেতন প্রায় ৫০,০০০(পঞ্চাশ হাজার) টাকা। এমনটি শোনেই অনেকে। একবুক আশা নিয়ে প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটাতে ভর্তি হন বাংলাদেশে বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টারে। যেখানে পাশ করে সিঙ্গাপুর আসা যায়।
ভর্তির সময় ট্রেনিং সেন্টারের লোকেরা বলে ট্রেনিং শেষে তাদের মাধ্যমেই সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। পাশ করার পরে কোনো ঝামেলা নেই। সহজেই ভিসা পাওয়া যায়। আসলে কি তাই? না, এতটা সহজ নয় মোটে।
একসময় অবশ্য সহজ ছিল। সেন্টার থেকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর সকল ব্যবস্থা করা হতো। এখন সিঙ্গাপুর কাজের চাহিদা অনুযায়ী লোক সংখ্যা অনেক বেশি। যার জন্য চাইলে ট্রেনিং সেন্টারের লোকেরা সহজে লোক পাঠাতে পারে না। পাশ করার পরে পরিচিত কারও মাধ্যমে অথবা দালালের মাধ্যমে আসতে হয়।
একসময় সিঙ্গাপুর আসতে সর্বমোট খরচ হতো এক লাখ আশি হাজার টাকা। দিনে দিনে বেড়ে এখন তা হয়েছে প্রায় দশ লাখ টাকা। এই বিশাল এমাউন্টের টাকা জোগার করতে অনেকে নিজের শেষ সম্বল ভিটামাটি বিক্রি করতে হয়।
স্বপ্ন দেখে সিঙ্গাপুর এসে অল্পসময়ে সকল টাকা শোধ করে ফেলবে। দেশে থেকে দালালদের বলা হয় যেন একটি ভালো কোম্পানিতে আইপি লাগানো হয়। দালালরা ভালো কোম্পানি বলে ফুসলিয়ে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে পাঠায় স্বপ্নের দেশ সিঙ্গাপুরে। তাও আবার একবছরের চুক্তিতে। একবছর পরে নতুন করে কন্ট্রাক্ট করে এভাবে ১৮ বছর থাকা যায়। এমনটিই বলে দালালরা। এখানে আসার পর ভালো কোম্পানি বাদ দিয়ে পরিচিত হতে হয় কোম্পানি নিয়ে তিনটি নতুন শব্দ-
Maincon, Subcon, Supply.
Maincon হলো সেই সব কোম্পানি যারা Government থেকে সরাসরি কাজ নিয়ে Subcon এর মাধ্যমে কাজ করান। Subcon এর যদি লোকের প্রয়োজন হয় তাহলে Suppy কোম্পানি থেকে লোক নিয়ে এসে কাজ করান।
এতে যারা এসে Maincon কোম্পানিতে কাজ করে তাদের বেসিক সেলারি কম হলেও প্রতিবছর ভিসা নবায়ন করতে তেমন চিন্তা করতে হয় না। তবে এখন ভিন্নরূপ। বেশিরভাগ Subcon যদিও ভিসা নবায়ন করেন, এর বিনিময় কর্মী থেকে $1500 থেকে $2000 ডলার নিয়ে যায়। কিছু কিছু আছে ব্যতিক্রম। তাঁরা টাকা ছাড়াই ভিসা নবায়ন করেন।
আবার কিছু কোম্পানি একবছর পরে বাছাই করে লোক পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু Supply কোম্পানিগুলো একবছর পরে কোনো কর্মীর ভিসাই নবায়ন করেন না। প্রতিবছর নতুন করে লোক নিয়ে আসা তাদের একটি ব্যবসা। কোনো কিছুর বিনিময়ে তারা ভিসা নবায়ন করতে রাজি হয় না।
দিনের পর দিন রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে শুধু একটাই আশা নিয়ে। তা হলো একবছর শেষে ভিসার নবায়ন করানো। কিন্তু সবার ভাগ্যে সেটা হয়ে উঠে না। ঋণের বোঝা আর চোখের জল নিয়ে ফিরে যেতে হয় বাড়ী।
তাহলে ভেবে দেখুন যারা ভিটামাটি বিক্রি করে বা লোন করে স্বপ্ন নিয়ে আসেন। তাদের একবছর পর পাঠিয়ে দিলে তাদের কী অবস্থা হয়?
বেশিরভাগই ১৮ ডলার বেসিকে কাজ করে। প্রতি সপ্তাহে রবিবার বন্ধ। দিনে দুই ঘন্টা ওভারটাইম। আবার শানিবার ওভারটাইম নেই। এতে মাসে শ্রমিকের বেতন আসে ৫০০-৫৫০ ডলার। তার মাঝে একমাসে খাওয়া ও যাবতীয় খরচ চলে যায় ২০০- ২৫০ ডলার। বাকি থাকে ২৫০-৩০০ ডলার। ৩০০ ডলার ধরলে বর্তমানে টাকার রেটে আসে বিশ হাজার থেকেও কম । তাহলে এক বছরে আসে প্রায় ২০০০০০৳।
যেখানে আসতে খরচ হয় প্রায় দশ লক্ষ টাকা। বাকি টাকা জলে যায়। সাথে একবছরে শ্রম। আবার নতুন করে আসতে লেগে যায় প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। যেটা সবার পক্ষে সম্ভব না।
তাই যারা দূর থেকে ভাবছেন সিঙ্গাপুর একটি স্বপ্নের দেশে, তারা এবার ভেবে দেখুন সিঙ্গাপুর আসলে কতটা স্বপ্নের। আসার আগে আরেকবার বসে পড়ুন ক্যালকুলেটর নিয়ে।
এটা হচ্ছে সম্পূর্ণ বাস্তব এবং সত্য বিশ্বাস টা আপনার কাছে।
(সংগৃহীত)
ভালো থাকুন | School of Awareness
No comments:
Post a Comment