Tuesday, March 9, 2021

চাকরিদাতা নামধারী বিভিন্ন প্রতারক প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার ফাঁদ হতে উত্তরণের উপায়!


জীবনের প্রয়োজনে হঠাৎ করে কোনো চাকরিতে যোগদানের প্রয়োজন হতে পারে। আর কনজারভেটিভ ফ্যামিলির সন্তানদের ক্ষেত্রে এটা কমন একটা ব্যাপার। যাহোক, এক্ষেত্রে একটা সমস্যা হলো চাকরির বাজার সম্পর্কে যাদের কোনোই ধারণা নাই তারা বিভিন্ন ফাঁদে পা দেয় ও পরে ভুল বুঝতে পারে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে চাকরির বাজারে শুধু তিনটি চাকরি সবসময় ওপেন আছে যেগুলো চাওয়ামাত্রই অল্প চেষ্টাতেই পাওয়া যায়; এসব হলো— গার্মেন্টসের পোশাক শ্রমিকের চাকরি, সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ এর চাকরি অর্থাৎ ভ্যানে করে কোম্পানির মালামাল নিয়ে দোকানে সেল দেওয়া এবং বিমা কোম্পানির এ্যাজেন্ট (বিমা করানোর কাজ) এর চাকরি। এর বাইরে আর কোনো চাকরি ফ্রি নেই। এর বাইরে চাকরি পেতে হলে সময় লাগবে এবং চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মানুষের এই বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে অনেক প্রতারক প্রতিষ্ঠান তাদেরকে চাকরি দেওয়ার নাম করে আর্থিক প্রতারণা করে থাকে।
তাই এখন বিভিন্ন ধরণের প্রতারক প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করা হবে।

প্রথমেই বলি 'ঘরে বসে আয়'— এই বিষয়টি নিয়ে। বিক্রয় ডটকমের জব সেকশনে 'ঘরে বসে আয়' এই ধরণের অনলাইন জবের পোস্ট এপ্রুভ করা হয় না। কারণ ঘরে বসে আউটসোর্সিং করে টাকা আয় করা যায় একথা সত্য কিন্তু সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে কিছু প্রতারক প্রতিষ্ঠান প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসে থাকে।
তাদের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করার জন্য একটি ঘটনা বলি। ২০১৪ সালে আমি এরূপ একটি ঘরে বসে আয়ের বিজ্ঞাপন দেখে সেটাতে আবেদন করলাম; প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল 'Optimum IT Solution'। এরা খুব সুক্ষভাবে প্রতারণাটি করেছিল; এতোটাই সু্ক্ষভাবে যে আমিও নির্দিধায় তাদেরকে সত্যিকারের প্রতিষ্ঠান মনে করেছিলাম।
চাকরির বিষয়াবলী ছিল যে, দৈনিক তিন ঘণ্টা করে অনলাইনে তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করতে হবে; বেতন মাসে ৯০০০ টাকা। আর কী কাজ সেটা শেখার জন্য বই এবং টিউটোরিয়াল এর ডিস্ক দেওয়া হবে, সেই কাজের সফটওয়্যারের ডিস্কও পার্সেল করে পাঠানো হবে। আর সবার আগে যেটা কথা সেটা হলো এই কাজ পাওয়ার জন্য প্রথমে অনলাইনে একটি পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষায় টিকলে তবে কাজটি পাওয়া যাবে। যাহোক আমাকে ই-মেইলের রিপ্লাই দিয়ে বলা হলো আগামী অমুক তারিখে (২৬ তারিখ ছিল কিন্তু কোন মাস ছিল সেটা এখন আমার মনে নেই) সকাল দশটায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, পরীক্ষার দশ মিনিট আগে পরীক্ষার লিংক ই-মেইলে পাঠানো হবে। লিংক ওপেন করে পরীক্ষা দিতে হবে। আর ১০:০০ টা বাজার আগে লিংক ওপেন হবে না; শুধু ১০টা বাজলেই লিংক ওপেন হবে।
যাহোক নির্দিষ্ট দিনে সকাল ১০ টা তে অনলাইনে পরীক্ষার দিলাম। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র খুবই মানসম্মত ছিল— বাংলা, ইংরেজি, আইটি নলেজ ও গণিত থেকে প্রশ্ন ছিল। ১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিলাম এবং পরীক্ষা বেশ ভালো দিয়েছিলাম। দুপুর আড়াইটায় তারা আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে ই-মেইল করলো এবং জানালো যে আমি তাদের প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য পরীক্ষায় টিকেছি। যেহেতু আমি পরীক্ষা ভালো দিয়েছিলাম তাই আমি ভেবেছিলাম সত্যিই আমি টিকেছি। কিন্তু আসল ঘটনা হলো যাতজনই পরীক্ষা দিয়েছিল সবাইকেই তারা অভিনন্দন জানিয়েছিল। এবং সেই ইমেইলেই কাজ পাওয়ার জন্য শর্ত জুড়ে দিল যে, আজ সন্ধ্যা ৬:০০ টার আগে এই ঠিকানায় এসে (মিরপুরের একটি ঠিকানা ছিল, আমার মনে হয় ওই ঠিকানায় ওদের কোনো অফিসই ছিল না) সকল সার্টিফিকেট এর ফটোকপি ও ২৫০ টাকা জমা দিয়ে কাজ শেখার বই, টিউটোরিয়াল এর ডিস্ক ও কাজের সফটওয়্যার এর ডিস্ক নিয়ে যেতে হবে। আর যারা অন্য শহরে থাকে বলে আসতে পারবে না তারা রাত ১০:০০ টার মধ্যে এই ডাচ্ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং এর নম্বরে (একটি নম্বর দিয়েছিল) ৩৭৫ টাকা সেন্ট করতে হবে এবং ইমেইলে সেই টাকা সেন্ট হওয়ায় Trx ID উল্লেখ করে ও কোন ঠিকানায় কাজ শেখার বই ও ডিস্ক চান সেই ঠিকানা ও ফোন নাম্বার উল্লেখ করে ইমেইল করতে হবে ও ই-মেইলে সকল সার্টিফিকেট এর স্ক্যান কপি সংযুক্ত করে দিতে হবে।
যাহোক আমি টাকা সেন্ড করলাম এবং সার্টিফিকেট এর স্ক্যান কপিসহ যথাযথভাবে ইমেইল করলাম। এবার আর ইমেইল এর রিপ্লাইও আসে না; যে নাম্বারে টাকা পাঠাইছি সেই নাম্বারও বন্ধ।
বুঝতে আর বাকি রইলো না যে প্রতারদেরকে টাকা দিয়েছি ও এতোসব কিছু নিস্ফল কাজ করেছি। আর এতোবড় সুক্ষ প্রতারণার সাথে অবশ্যই আইটি এক্সপার্টরা জড়িত। তা না হলে এতো সুন্দর ও মানসম্মত প্রশ্নে পরীক্ষা তারা নিতে পারতো না। যাহোক কথা হলো এরূপ ভুল কেউ করবে না।

সে বছরে এরূপ আরও একটি 'ঘরে বসে আয়' এর ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে আমি টাকা দিয়েছিলাম; তারা এর নাম দিয়েছিল Earn Bank। তারা তাদের মোটিভেট করার পদ্ধতি হিসেবে একটি সুন্দর ওয়েবসাইট বানিয়েছিল। তবে তারা পরীক্ষা নেয় নি। তারা ফোন করে ইন্টারভিউ নিয়েছিল। তাদের ইন্টারভিউয়ে অংশ নেওয়ার জন্য ১০০ টাকা বিকাশ করতে হয়েছিল ও তাদের ওয়েবসাইটে অনলাইনে একটি ফরম পূরণ করতে হয়েছিল ও যে নাম্বার থেকে টাকা পাঠাইছি সেই নাম্বার দিতে হয়েছিল। আর যেহেতু মাত্র ১০০ টাকা তাই যা হয় হবে ভেবে টাকা দিয়েছিলাম। দুইদিন পরে তারা ফোন করে ৬ মিনিট কথা বলে ইন্টারভিউ নিলো ও বললো পরে ফলাফল জানানো হবে। পরে আর জানায়নি; তাদেরকে ফোন করে জানতে পারলাম আমি তাদের কাজের জন্য নির্বাচিত হইনি এবং তারা আমার চেয়ে ভালো প্রার্থী যাদের পেয়েছেন তাদের নিয়োগ দিয়েছেন।
যাহোক তোমরা এরূপ কোনো প্রতিষ্ঠানের পেছনে সময় ও অর্থ ব্যয় করবে না।

এবার আসি টার্গেট দিয়ে কাজ দেওয়া জবের ফাঁদ পাতা প্রতিষ্ঠান এর বিষয়ে কথা বলতে। এরা হিসেব নিকেশ করে এমন একটা টার্গেট নির্ধারণ করে যেটা অর্জন করার কাছাকাছি যাওয়া যায় কিন্তু অল্পের জন্য অর্জন করা যায় না। এর মাধ্যমে দেখা যায় টার্গেট পূরণ না হলে তারা কোনো পার্সেনটেজ দেয় না। আর এর মাধ্যমে যে পরিমাণ বিক্রি তুমি করে দিতে পারলে সেটা তাদের লাভ। একবার এক কম্পিউটার বিক্রির প্রতিষ্ঠানের পার্টটাইম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে তাদের প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ দিতে গেলাম। তারা টার্গেট দিলো নিজেদের ফ্রেন্ড সার্কেল ও রিলেটিভদের মাঝে মার্কেটিং করে তাদের প্রতিষ্ঠান হতে মাসে ১৫ টি কম্পিউটার এক্সেসরিজ বিক্রি করতে হবে। সেজন্য আমার একটি নিবন্ধন নাম্বার থাকবে। আর যেসব কম্পিউটার এক্সেসরিজ বিক্রি করা হবে তার মধ্যে ৫ টি একদম কমদামী ও ৫ টি মোটামুটি দামী হওয়া যাবে এবং কমপক্ষে ৫ টি অবশ্যই বেশিদামী হতে হবে যথা সিপিইউ, মনিটর, ল্যাপটপ এই জাতীয়। বুঝতেই পারছো কত বড় টার্গেট। যাহোক তারা চাকরিপ্রার্থীদের এমনভাবে মোটিভেট করে যে এই টার্গেট পূরণ করা কোনো ব্যাপারই নয়, কজে হাত দিলেই হয়ে যাবে। আর ইন্টারভিউ গ্রহণকারীরা এমনভাবে মোটিভেশন দেয় মনেহয় এখনই এই কাজে লেগে যাই। আমাকে ইন্টারভিউ গ্রহণকরী বলেছিল, "আমি যখন ছাত্র ছিলাম তখন টাকার জন্য ইভেন্টের কাজ করতাম, সামিয়ানা টাঙাতাম, মঞ্চ বানাতাম ইত্যাদি ইত্যাদি; আর এটা তো তার চেয়ে অনেক স্টান্ডার্ড কাজ"। কিন্তু চিন্তা করে দেখো মঞ্চ বানানো একটি প্যাকেজ কাজ, কষ্টের কাজ হলেও সেটা করা যায় কিন্তু অন্যকে রাজি করে এভাবে প্রোডাক্ট বিক্রির টার্গেট পূরণ করা ওতো সহজ নয়। এটা পুরাই একটা ব্যবসায়ী ফাঁদ।

এবার কিছু বলতে হয় টার্গেট পূরণের ইভেন্ট জব বিষয়ে। তার আগে একটা কথা বলে নেই। বাংলাদেশে যত বড় বড় নামীদামী প্রতিষ্ঠান আছে তাদের অধিকাংশেরই ভেতরে কিছু নোংরা গল্প লুকিয়ে থাকে। এমনকি এফএম মেথড এর মতো প্রতিষ্ঠানও যে ফাঁও কাজ করে নেওয়ার জন্য টোপ ফেলে তা আমি কল্পনাও করতে পরিনি। যাহোক বছরখানেক আগে তাদের একটি ইভেন্ট প্যাকেজের কাজের বিজ্ঞাপন দেখে ইন্টারভিউ দিলাম ও কাজ করতে আগ্রহী হলাম। কাজটা ছিল- তাদের স্টুডেন্ট কালেকশনের জন্য একটি ফ্রি সেমিনার হবে। সেজন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মেসে গিয়ে প্রচারণা চালিয়ে সেই সেমিনারে ছাত্রছাত্রীদের ইনভাইট করে সেমিনারে আনতে হবে। যতজন আসবে তার উপরে একটা ইনসেন্টিভ পাওয়া যাবে তবে শুধু টার্গেট পূরণ হলেই সেই ইনসেন্টিভ পাওয়া যাবে। ৩০ জনের নিচে এলে কোনো ইনসেনটিভ পাওয়া যাবে না, শুধু দিনপ্রতি কাজের জন্য ১০০ টাকা পাওয়া যাবে। আর সেই ১০০ টাকার ৫০ টাকা আবার আগ্রীম দেয় বাকি ৫০ টাকা সেমিনারের দিনে। আর আমি যে কয়জনকে সেমিনারে আনতে পারবো তাদের মধ্যে থেকে ২০ জন ভর্তি হলে আমি ২৪০০ টাকা পাবো; এর কম ভর্তি হলে কিছু পাবো না। আর কে কে আমার মাধ্যমে এসেছিল ও ভর্তি হয়েছে তা বোঝার জন্য লগশিট মেইনটেইন করতে হবে। অর্থাৎ আমাকে একটি ছক টানা কাগজ দেওয়া হবে। সেই কাগজে আমি কার কার সাথে কথা বলেছি তার নাম, মেসের নাম এবং ফোন নাম্বার লেখা থাকবে। যাহোক আমি প্রথমদিন কাজ করে লগশিট জমা দিলাম। বিকেলে বের হয়ে ২৪ জনের সাথে কথা বলে তাদের তথ্য লিখেছিলাম। এতে শাখা পরিচালক হয়তো আমার কাজ করার এনার্জি দেখে বুঝতে পেরেছিলেন যে আমি টার্গেট পূরণ করেই ছাড়বো। তাই সে আমাকে বললো আজকে আমাদের সাথে মার্কেটিং করেন। এর মানে হলো কলেজ ও ভার্সিটির সামনে তাদের একটি লোক থাকবে এবং একটি টেবিল, লিফলেট ও বড় ছাতা থাকবে। এতে ওদের সুবিধা হলো সেখানে তো আর কারও সাথে বেশি কথা বলার মতো পরিবেশ থাকে না; সর্বোচ্চ বলা যার যে অমুক দিনে অমুক জায়গায় আমাদের ক্যাম্পাসে ফ্রি সেমিনার আছে, আসিয়েন। লগশিট লেখার মতো পরিবেশ সেখানে থাকে না। ফলে মার্কেটিং করলেও লগশিট না লিখতে পারলে সেটা কিন্তু আমার সফলতা হিসেবে কাউন্ট করা হবে না। যাহোক সেদিন ভার্সিটিতে আমার অন্য একটা কাজ থাকায় আমি ইচ্ছা না থাকাতেও নিজের ভার্সিটির গেটে দাঁড়িয়ে মার্কেটিং এর কাজ করলাম এবং তার পরের দুইদিন একবেলা করে মেসে মেসে ক্যাম্পইন করলাম। হয়তো আমার টার্গেট পূরণ হতো। কিন্তু বিধির কী খেলা! সেমিনারের দিনে নিম্নচাপ, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও ঝড়বৃষ্টি শুরু হলো ও আবহাওয়া অত্যাধিক ঠাণ্ডা হয়ে গেলো। এমন দিনে কেউ সেমিনারে যাবে এটা কল্পনাতীত। যাহোক আমি সেজন্য সেমিনারে যাইনি। আর সেমিনার ছিল দুইদিন। যেহেতু প্রথম দিনের এই দুর্দশা তাই পরেরদিন আবহাওয়া ভালো থাকলেও আমি যাইনি। ফলে আমার টার্গেটের কি অবস্থা হয়েছে সেই খবর আর মনের দুঃখে নেই নি। আর তারা এই কাজের জন্য আমি যে আরও হিসেবের ২০০ টাকা পাই সেই টাকার একটি টাকাও দেয় নি, খোঁজও নেয়নি। শুধু মার্কেটিং এর দিনগুলোতে চারদিন ৫০ টাকা করে দিয়েছিল রিক্সা ভাড়া ও নাস্তার জন্য।
এরপর একমাস পরে আবার আমাকে ফোন দিয়েছে আবার নাকি তাদের ফ্রি সেমিনারের ও ভর্তির প্রচার ক্যাম্পইন আছে তাতে কাজ করার জন্য। বুঝো অবস্থা! কতটা নির্লজ্জ হলে কেউ এমন করতে পারে?
আমি আর যাইনি। যাবো কেনো? তাদের ভণ্ডামি তো দেখলামই। তোমরাও এরূপ কোনো টার্গেট এর কাজে যাবে না। যদি ডাইরেক্ট পারসেন্টেজ এর কাজ হয় কোনো টার্গেট না থাকে এবং নগদ টাকার কাজ হয় সেসব প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পেইনের কাজে যাবে।

আর হ্যা, এসব তো গেলো ছোটোখাটো প্রতারক প্রতিষ্ঠান এর বিষয়ে যারা ফাঁও কাজ করে নেয়। কিছু কিছু বড় মাপের প্রতারক প্রতিষ্ঠান আছে যারা চাকরি দেওয়ার নাম করে ও ট্রেনিং ফি/ জামানত এটা সেটার কথা বলে প্রতিজন লোক হতে কয়েক হাজার করে টাকা হাতিয়ে নেয়। সেসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারবে লাইফ একাডেমির 'স্কুল অব অ্যাওয়ারনেস' প্রজেক্টের ফ্লপ ইনভেস্টমেন্ট বিভাগে ও 'চাকরি বাজারের সতর্কতা' ফিচার থেকে।

© লেখা: মেহেদী হাসান
বই— 'স্বপ্ন, ভালোবাসা ও বাস্তবতা' (লেখা চলছে)।

Home  |  Facebook  |  YouTube

Tuesday, April 16, 2019

ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিশ্চিত পেশা ফ্রিল্যান্সিং! : টিকে থাকার উপায়→


এই লেখার শিরোনাম দেওয়া যেতে পারে— ফ্রিল্যান্সারের প্লান 'বি'।

আপনি যদি ফ্রিল্যান্সার হন, মাসে যদি মোটামুটি নির্দিষ্ট একটা ইনকাম করছেন, তবে বোঝা যায় আপনার প্লান A সফল হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আপনার প্লান B কি রেডি আছে? যদি থাকে খুবই ভাল কথা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের বেশিরভাগ ফ্রিলান্সারেরই কোন প্লান B নেই। কারণ আমরা ধরেই নেই এভাবেই মনেহয় আমাদের বাকি জীবন চলতে থাকবে। আসলে এর থেকে ভুল ধারনা আর কিছু হতে পারে না। অনলাইন জগৎ প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। যারা স্কিল ডেভেলপ করে তাল মিলাতে পারবে, একমাত্র তারাই টিকতে পারবে। বাকিরা ঝড়ে পড়ে যাবে। তাই আপনার প্লান B রেডি থাকতে হবে, যেন প্লান A যদি কোন কারনে ব্যর্থও হয়, তার পরেও যেন আপনি ভালকরে টিকে থাকতে পারেন।
অসংখ্য উদাহরণ দিতে পারি, একসময় অনেকেই খুবই সফল ফ্রিলান্সার ছিলেন, কিন্তু এখন তাঁরা ব্যর্থ। ইনকামের বিকল্প কোন সোর্স রেডি না করতে পেরে তাঁরা এখন সবার করুনা আর উপহাসের পাত্র। নাম না উল্লেখ করে কিছু বাস্তব উদাহরণ দেই—

১. Elance মার্কেটপ্লেসে কাজ করত একজন সফল ফ্রিলান্সার। হাতে গোনা কয়েকজন বায়ার দিয়ে খুবই ভাল কাজ করত। তার বড় একটা টিম ছিল। Elance, oDesk এর সাথে মিলে যাবার পর তার কাজে ধ্বস নামে। প্রায় সব বায়ার হাতছাড়া হয়ে যায়। প্রায় ৬ মাস তাঁরা কর্মীদের প্রায় বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিয়ে, চালাতে না পেরে সবাইকে বিদায় করে। এখন নিজে নিজে কাজ করে, কোন মতে কাজ টিকে আছে।
২. পরিচিত একজন, Fiverr এ খুবই ভাল কাজ করত। খুব সুন্দর একটা অফিসে প্রায় ১২ জনের একটা টিম নিয়ে কাজ করত। প্রায় ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে শুধু অফিস ডেকোরেশন করেছিল। বেশ কয়েকটা বিদেশি একাউন্ট ছিল VPN, প্রক্সি দিয়ে চলাত। একে একে সব ব্যান হয়ে যায়। এখন নামে মাত্র অফিসে থাকলেও, তার মূল ব্যবসা হচ্ছে ফিলান্সিং টিউশনি, মানে মানুষের বাসায় গিয়ে ফ্রিলান্সিং শেখানো। টিকে থাকার জন্য আসলে সে এই ধান্দাবাজি করছে, অধঃপতন আর কাকে বলে!
৩. কয়েকদিন আগের ঘটনা, একজনের সাথে কথা হচ্ছিল। সে শুধু ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভের কাজ করেই Upwork থেকে গত কয়েক বছর ধরে ভাল ইনকাম করছিল। এর বাহিরে সে কিছু জানে না, শেখার চেষ্টাও করেনি। কোন কারনে তার একাউন্ট সাসপেন্ড। এখন Fiverr এ এসেছে। অনেক চেষ্টা করেও কোন অর্ডার পাচ্ছে না। খুবই হতাশ।
৪. একজন ফ্রিলান্সার লোভে পড়ে, তার পুরো ইনকামের ৫৬ লক্ষ টাকা, শেয়ার বাজারে ইনভেস্ট করে প্রায় পুরটাই খুইয়েছে। যে কাজের ফ্রিন্সান্সিং করত তার চাহিদা কমে গেছে, আর সে নিজেকে আপডেট করতে পারেনি। এখন চাকরীর জন্য বিভিন্ন অফিসে ট্রাই করছে।
৫. বছর তিনেক আগে একজন ফ্রিলান্সার, গ্রুপে ইনকামের স্ক্রিনশট দিয়েছিল সেটা তার এক মাসের ইনকাম ১ হাজার ডলারের স্কিনশট ছিল! পোষ্টের হেডিং ছিল পারলে ঠেকা। আসলে তাকে ঠেকানোর কোন সুযোগই এখন নেই, কারণ সেই লোকে এখন ফ্রিলান্সিংই করে না।
৬. আমার পরিচিত এক ছোট ভাই কাজ করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ল। হঠাৎ একদিন তার ব্রেন স্ট্রোক করল। প্রায় ৭ দিন হাসপাতালে ভর্তি থেকে এবং মাস ছয় বেড রেস্টে থেকে এখন কিছুটা সুস্থ। ফ্রিলান্সিং তার মাথায় উঠেছে।

আসলে লিখতে গেলে এই রকম গল্প অনেক বলা যাবে। তাই আর লিখছি না,
সবাইকে বলব সময় থাকতে সাবধান হোন। আপনার প্লান B রেডি করে ফেলেন। কোন কারনে যদি আপনার একাউন্ট চলে যায়, বা ইনকামের সোর্স নষ্ট হয়ে যায়, তার পরেও যেন ভাল করে টিকে থাকতে পারেন। টিকে থাকার জন্য আপনি কি কি করতে পারেন সেই ব্যাপারে আমার কিছু মতামত দিচ্ছি। আপনার কোন আইডিয়া থাকলে কমেন্টে দিতে পারেন।

১. আপনার প্রথম ইনকাম চালু হবার সাথে সাথে ব্যাংকে একটা DPS খুলে ফেলেন সামর্থ্য অনুযায়ী। বিশ্বাস করেন,এটা একসময় আপনার বিপদের বন্ধু হিসেবে কাজে দেবে।
২. আপনি যে কাজ করেন সেটা আপনার খুব ঘনিষ্ট কেউ, যেমন ভাই, বোন, স্ত্রীকে মোটামুটি শিখিয়ে দেন। যেন আপনার অবর্তমানে সে চালিয়ে নিতে পারে। ব্যক্তিগত কারনে আমার একাউন্ট প্রায় দেড় মাস বন্ধ রেখেছিলাম। তখন এটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি।
৩. চীনাদের মত মাসিক সঞ্চয় করুন। তাদের নীতি হচ্ছে আগে সঞ্চয় করতে হবে। এর পরে যদি কিছু বাচে, তবে সেটা খরচ করতে হবে। আমরা করি উল্টা, খরচের পর যদি কিছু থাকে তবে সঞ্চয় করি। এটা উচিৎ না। ব্যাংকে কত টাকা জমাবেন সেটা টার্গেট করেন। সেটা অর্জন না করা পর্যন্ত লেগে থাকেন।
৪. ইনকামের আরেকটা সোর্স চালু করেন। Fiverr পাশাপাশি অন্য মার্কেটপ্লেস ট্রাই করেন। যেন Fiverr এর প্রফাইল চলে গেলেও টিকতে পারেন।
৫.রেগুলার পারমানেন্ট বায়ার তৈরি করেন। একসময় হয়ত আর মার্কেটপ্লেসে কাজ নাও করা লাগতে পারে।
৬. জমিতে বিনিয়োগ করেন। জমির বিনিয়োগ লাভজনক। হতে মোটামুটি টাকা হলেই জমি কিনে রেখে দেবেন। আমার পরিচিত যারা এইধরনের বিনিয়োগ করেছেন তাঁরা প্রায় সবাই লাভবান হয়েছেন। শহরে থাকলে ফ্লাটে বিনিয়োগ করতে পারেন। এটাও লাভজনক।
৭. কৃষিতে বিনিয়োগ করতে পারেন। এটা এখন খুবই লাভজনক ব্যবসা। ফিশারিজ, পোল্ট্রি এখন অনেক লাভজনক। ইকমার্স এর ব্যাবসাও ভাল করছে। সামনে ঈদ, এটা নিয়ে এগুতে পারেন। ভাল লাভ থাকবে।
৮. ভুলেও শেয়ার বাজার বা কোন MLM ব্যবসায় যাবেন না, এমনকি পরিচিত কেউ যদি এসব ব্যবসা করে তবে তার থেকে ১০০ হাত দূরে থাকুন। কারন আর নাইবা বললাম।
৯. আপনি যে সার্ভিস দেন সেটার উপর একটা সার্ভিস সাইট করে রাখেন। একদিন এটা আপনার সম্পদে পরিণত হবে।
১০. রেন্ট এ কারে বিনিয়োগ করতে পারেন। ভাল লোক পেলে আপনার ইনভেস্ট লাভসহ উঠে আসবে। নিজের কাছের কেউ ভাল ড্রাইভিং জানলে এটা নিয়ে এগোতে পারেন।
১১. ডিলারশিপের ব্যাবসা করতে পারেন। ভাল কোম্পানির ডিলারশিপ অনেক নিরাপদ ব্যাবসা।

আমি বলব, নিজেকে নিজেই মোটিভেট করেন। নিদিষ্ট একটা সময় নির্ধারণ করেন যে, এই সময়ের মধ্যে আপনি কি কি অর্জন করবেন। সেটা কাগজে লিখে ফেলেন, সেগুলো অর্জন করার চেষ্টা করেন। প্রতিটা অর্জনে নিজেকে পুরস্কৃত করেন। এই ব্যাপারে আরও ভাল আইডিয়া পেতে চাইলে, আপনার কাছের কেউ যদি ব্যাংকে চাকরী করে, তবে তার পরামর্শ নিতে পারেন। কারন বৈষয়িক ব্যাপারে আমার মতে, তাদের মত ভাল কেউ জানে না। দেখবেন বেশির ভাগ ব্যাংকার বয়স ৪০ হবার আগেই তার জীবন গুছিয়ে ফেলে, ভবিষ্যতে কি কি করবে সব কিছু তার কাছে ফিলিপস বাতির মত পরিস্কার। তাদের থেকে অনেক ভাল ভাল পরামর্শ পাবেন।
অনেক ইয়াং ফ্রিলান্সার আছে অল্প বয়সে ভাল ইনকাম করে, সেই টাকার চূড়ান্ত অপচয় করে। অনেকেই দামি মোটরবাইক কিনে ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে শো অফ করে। আইফোন, মাকবুক কিনে টাকার শ্রাদ্ধ করে! (যদি কাজের খাতিরে দরকার হয় তবে সেটা ভিন্ন কথা) টাকা আজে বাজে কাজে খরচ করে। এসব করা উচিৎ না। টাকা সঞ্চয় করা শেখা উচিৎ।
আমাদের দেশে অধিকাংশই ৪০ বছর পার হবার পর পরই জীবনের হিসেব মেলানো শুরু করে দেয়। কি চাইলাম আর কি পেলাম, এসব বলে হা হুতাশ করতে থাকে। তাই জীবনে যেন হা হুতাশ না করতে হয়, এই জন্য যা কিছু করার ৪০ এর আগেই করে ফেলা উচিৎ। এর পরে আপনার অর্জনগুলো শুধু উপভোগ করবেন। অনেকে মনে করতে পারেন ৪০ আসতে অনেক বাকি। ঠিক আছে আপনি ৩০ এর মধ্যেই সব কিছু করে ফেলেন। আপনাকে কে ঠেকাচ্ছে।

একটা সাফল্যের গল্প দিয়ে লেখা শেষ করব। সেদিন কোন এক গ্রুপে একজন ফ্রিলান্সারের পোষ্ট দেখলাম। সে আগামী আড়াই বছরের জন্য বিশ্ব ভ্রমনে বের হচ্ছে। ভ্রমনের প্লান রেডি। মানে আগামী আড়াই বছর সে বিশ্বের সম্ভব সব যায়গা ভ্রমন করবে। কারন সে এই ইয়াং বায়সেই সবকিছু সুন্দর ভাবে গুছিয়ে নিয়েছে। একটু চোখ বন্ধ করে তার যায়গায় নিজেকে কল্পনা করেন। দেখেন কেমন লাগে।
তাই বলব হাতে এখনো সময় আছে। আপনার প্লান B রেডি করে ফেলেন।
ধন্যবাদ!
লেখক: Golam Kamruzzaman (Admin: Fiverr BD Solution)

ভালো থাকুন | School of Awareness

Monday, February 11, 2019

জেনে নিন— কোথায় চাকরির আবেদন করবেন না এবং কেন?


১. সরকারী বিজ্ঞপ্তিতে যদি একজন বা দুইজন লোক নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হয়, নিশ্চিত থাকুন এখানে লোক নিয়োগ সম্ভবত পূর্বনির্ধারিত (হয় লবিং নয় অন্যকিছু)।
২. কোনো এনজিওতে যদি ৩০০/৫০০ লোকবল নিয়োগের উল্লেখ করা হয় এবং আবেদনের জন্য বা ট্রেইনিং এর পূর্বে টাকা চাওয়া হয়। বেসরকারী খুব কমই প্রতিষ্ঠান আছে যাদের পক্ষে আদৌ একসাথে এত লোকের নিয়োগ হ্যান্ডেল করা সম্ভব। এটাও একধরনের ব্যবসা, প্রতারণার ব্যবসা।
৩. জেনে রাখুন কিছু প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে যেখানে টেমপোরারী ওয়ার্কিং লোকজনই নিয়োগ পায়। শুধু আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার্থে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় যেমন- আই.সি.ডি.ডি.আর.বি, সরকারি (স্বায়ত্ত্বশাসিত) বিশ্ববিদ্যালয়।
৪. যদি আপনার কাছে কোনো ফোন আসে আর আপনাকে বলে আপনার সিভি ওমুক জব সাইট বা তমুক জব সাইট থেকে পেয়েছি। আপনাকে জয়েন করতে বলে। জবপোর্টালগুলোই সরাসরি আপনাকে ফোন দিবে, কোনো এমপ্লয়ার না। এ ধরণের কল করে ধান্দাবাজ কোম্পানীগুলো।
অনেক সময় বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া (Facebook/G+) থেকে আপনার নম্বর কালেক্ট করে ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে ফোন দেয়া হয়।
৫. বিজ্ঞাপনে যদি কোম্পানীর এড্রেস না দেয়া থাকে- শতকরা ৯৯% ক্ষেত্রে এরা ভুয়া কোম্পানী।
৬. যদি সরাসরি লবিং না থাকে তাহলে সরকারী রিসার্চ ল্যাবগুলোতে আবেদন করবেন না— BCSRI, NIB, BRRI, IRRI, Atomic Energy Comission, IEDCR, BIISS, BIDS, BJRI, BARI; ব্যাংক ড্রাফট করার পরেও ৫০-৬০% ক্যান্ডিডেটদের এরা পরীক্ষাতেই ডাকেনা।
৭. প্রধানমন্ত্রীর অধিদপ্তরের কোনো পদে আবেদন করার আগে ১০ বার ভাবুন— সেখানে যেকোনো পদই খুবই ডিমান্ডিং, তাই লবিং অত্যন্ত বেশি থাকে। সাধারণত দলীয় লোক না হলে সচারচর নিয়োগ দেয়া হয় না।
৮. যেকোনো স্কুল বা কলেজের বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদনের পূর্বে সরেজমিনে তাদের অবস্থা দেখে আসুন অথবা কাউকে দিয়ে খোঁজ নিন। আজকাল অনেক স্কুল কলেজের বিজ্ঞপ্তি শুধুই আনুষ্ঠানিকতা সারতে দেয়া হয়। ৫০০ টাকা ব্যাংক ড্রাফট করার আগে প্রতিষ্ঠান কতটা নতুন/পুরাতন (Financially Stable) তা যাচাই করে নেয়া উচিত।
৯. সেলস সংশ্লিষ্ট কোনো পদে আবেদনের জন্য যদি ফি দেয়া লাগে। বাংলাদেশের প্রায় সকল কোম্পানীতেই Sales Officer/ Executive/ Representative পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়া হয় , ট্রেইনিং দেওয়া হয় নিজ খরচে। তাই এসব পদে আবেদনের ক্ষেত্রে কখনওই লেনদেন করবেন না।
('চাকরির খবর' থেকে সংগৃহীত)
সংগ্রহে: S M. Sarowar Hossain

ভালো থাকুন | School of Awareness

Sunday, February 10, 2019

চাকরি দেবার নামে বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার ফাঁদ হতে সাবধান থাকুন!


কোনো প্রতিষ্ঠান যদি চাকরি দেবার কথা বলে সিকিউরিটি ডিপোজিট, প্রশিক্ষণ ফি কিংবা অন্য যেকোনো নামে কোনো টাকা চায় তবে আপনি নিশ্চিত থাকুন যে আপনি প্রতারকের খপ্পরে পড়ছেন।
কোম্পানী তার স্বার্থে আপনাকে প্রশিক্ষণ দিবে সেক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ফি নেবার প্রশ্নই ওঠে না। অনেক কোম্পানী প্রশিক্ষণ দেবার জন্য কোম্পানীর খরচে তার কর্মীদের বিদেশে পর্যন্ত পাঠায়। কিংবা আপনি পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে চলে যেতে পারেন এসব কথা বলে সিকিউরিটি ডিপোজিট চাইলে বুঝবেন আপনি প্রতারকের খপ্পরে পড়ছেন। কারণ সৌদি এয়ারলাইন্স, মাইক্রোসফট, গুগল এর মতো কোম্পানী সিকিউরিটি ডিপোজিট চায় না তাহলে এসব দুই টাকার কোম্পানী কেন চাচ্ছে নিজেকেই প্রশ্ন করুন।
► কিংবা কেউ যদি চাকরি দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিকাশে টাকা চায় তাও বুঝবেন আপনি প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন। কিছুদিন পর দেখবেন ঐ নাম্বার বন্ধ।
আপনার বেকারত্বকে পুঁজি করে এসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে। তাই আপনার সচেতনতাই পারে প্রতারণার হাত থেকে মুক্ত থাকতে।

ভালো থাকুন | School of Awareness

Wednesday, January 30, 2019

প্রতারক বা বাটপার চেনার কিছু কৌশল এবং আপনার কিছু পদক্ষেপ।


প্রথম পর্বের পর...
বর্তমানে টাকা দিয়ে চাকুরী নিতে গিয়ে অনেকেই অগ্রীম টাকা দিয়েছেন এবং অর্থ ক্ষতির সম্মুক্ষীন হয়েছেন, যার অধিকাংশই মধ্যবিত্ত পরিবারের সাথে ঘটেছে । তাই, যদি অগ্রীম টাকা দিয়ে চাকুরী নিতে চান তবে প্রথম কাজ হচ্ছে ব্যক্তি নির্বাচন অর্থাৎ যিনি আপনাকে চাকুরী দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন তিনি সত্যিই উপযুক্ত কিনা? ভুল লোকের কাছে গেলে আপনার সময় এবং সুযোগ দুটোই নষ্ট হবে । কে যে সঠিক লোক তা বোঝা যদিও খুব কঠিন তবে কিছু বিষয় মাথায় রেখে কাজ করবেন, যেমন :

আপনি যাকে টাকা দিচ্ছেন, আপনি তাকে কতটুকু চেনেন? কিভাবে চেনেন? কার মাধ্যমে চেনেন? সে 'সব পারি' এই রকমের ভাব দেখাচ্ছে কিনা? তার মুখের ভাষা কেমন? তার শিক্ষাগত যোগ্যতা কৌশলে জানার চেষ্টা করুন । সে লোকটির বয়স কেমন? চাকুরী দেওয়ার ক্ষেত্রে সাধারনত ৪৫ থেকে ৬০ বছরের মানুষের সফলতা বেশি হওয়ার কথা কারন তার নিজের ভিতরে ক্ষমতা অর্জন করতে করতেই এই সময় লাগবে । আর একটি বিষয় হচ্ছে কাজটি কি ওই ব্যক্তি নিজে করবেন নাকি কারো সাহায্য নিবেন? আপনি ওই লোকের বাসা বা কোন স্থায়ী ঠিকানা জানেন কিনা? আপনি সেখানে পৌঁছুতে পারবেন কিনা? ওই ব্যক্তি যদি আপনার টাকা দিতে না চায় তবে আপনি তাকে চাপ দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন কিনা? একদম অপরিচিত লোকের লোভনীয় প্রস্তাবে রাজী হওয়ার আগে সময় নিন । হুট করে কাজ করবেন না । 

সাধারনত যারা চাকুরী করেন বা স্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে এমন কাওকে টাকা দিলে টাকা তুলতে সুবিধা হয় কারন তাদের সম্মান হারানোর ভয় থাকে তাদের সহকর্মী বা সহ ব্যবসায়ীর কাছে। কিন্তু রাজনৈতিক লোক, মন্ত্রীর পি এস, এ পি এস, ভাই, ভাতিজা, এ..ও.. যাকেই টাকা দেন না কেন ,কাজ না হলে টাকা ফেরত পাওয়া প্রায় অসম্ভব । 

যদি অগ্রীম হিসাবে কেও ৫০০০/ ১০০০০/ ২০০০০ টাকা চায় হাত খরচ হিসাবে, ভুলেও দিবেন না । প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায় আপনার পুরো টাকাটাই নষ্ট হল । চাইলে আপনি বলে দেন, কাজ হলে হাত খরচ দ্বিগুন দিয়ে দিবেন ।

যদি অগ্রীম টাকা দেন, ওই ব্যক্তির চেক রেখে দিবেন আর ৩০০ টাকার স্টাম্পে চাকুরীর কথা উল্লেখ করে লিখিত রাখবেন। এই প্রমাণ ভবিষ্যতে যে কোন সময় আপনার কাজে আসবে । আর যদি নিজে কখনো চেক দেন তবে ভুলেও Blank চেক দিবেন না ,এতে পরবর্তীতে সে নিজের ইচ্ছামত টাকার পরিমাণ বসিয়ে নিতে পারে। তবে যে চেকই দেন না কেন, ৩০০ টাকার স্টাম্পে ঘটনা উল্লেখ করে চেকের নাম্বার উল্লেখ করুন । নয়তো, ওই লোক খারাপ হলে আপনার চেক দিয়েই আপনাকে ব্লাকমেইম করতে পারে । 

নিজের আত্মীয় স্বজন, বন্ধু, এদের সাথে কাজ করার ক্ষেত্রেও সাবধান কারন এদের ভিতরেও অনেকে ফটকাবাজ ধরনের হয় । আপনি হয়তোবা ভাবছেন, আমার সাথে এমন করবে না কিন্তু ঘটনা ঘটে গেলে শেষ রক্ষা হবে না । 

জানি একটা চাকরীর জন্য আপনি মরিয়া হয়ে গেছেন । বয়স চলে যাচ্ছে.....সংসারে টানাটানি....বোনের বিয়ে বাদ.... নিজেও বিয়ে করতে পারছেন না......তাই যে কোন মূল্যেই হোক ........ । এই পরিস্থিতিতে আমার এসব কথা আপনার ভাল লাগবে না, এটাও জানি । তবুও বলবো একটু ভেবে সামনের দিকে যান.....হিতে না বিপরীত হয়ে যায় শেষে । 

দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে ,আপনি যার সাহায্য নিচ্ছেন তার কথাবার্তা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং বিশ্লষণ করা অর্থাৎ তার কথা যুক্তিযুক্ত কিনা এবং বাস্তবতার সাথে সংগতিপূর্ণ কিনা? এই বিষয়ে তৃতীয় পর্বে উল্লেখ করা হবে ।
চলমান....
সুত্র: "নীরব প্রতিবাদ" পেজ থেকে সংগৃহীত।

ভালো থাকুন | School of Awareness

Wednesday, January 23, 2019

সিঙ্গাপুর গিয়ে আয় করার পরিকল্পনা করলে সচেতক হোন!


সিংগাপুর আসার কথা ভাবছেন? একটু থামুন এবং হিসেব মিলিয়ে নিন।
পাশের বাড়ির কেউ একজন সিঙ্গাপুর গিয়ে ভালো টাকা ইনকাম করছেন। শুরুর বেতন প্রায় ৫০,০০০(পঞ্চাশ হাজার) টাকা। এমনটি শোনেই অনেকে। একবুক আশা নিয়ে প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটাতে ভর্তি হন বাংলাদেশে বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টারে। যেখানে পাশ করে সিঙ্গাপুর আসা যায়।
ভর্তির সময় ট্রেনিং সেন্টারের লোকেরা বলে ট্রেনিং শেষে তাদের মাধ্যমেই সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। পাশ করার পরে কোনো ঝামেলা নেই। সহজেই ভিসা পাওয়া যায়। আসলে কি তাই? না, এতটা সহজ নয় মোটে।
একসময় অবশ্য সহজ ছিল। সেন্টার থেকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর সকল ব্যবস্থা করা হতো। এখন সিঙ্গাপুর কাজের চাহিদা অনুযায়ী লোক সংখ্যা অনেক বেশি। যার জন্য চাইলে ট্রেনিং সেন্টারের লোকেরা সহজে লোক পাঠাতে পারে না। পাশ করার পরে পরিচিত কারও মাধ্যমে অথবা দালালের মাধ্যমে আসতে হয়।
একসময় সিঙ্গাপুর আসতে সর্বমোট খরচ হতো এক লাখ আশি হাজার টাকা। দিনে দিনে বেড়ে এখন তা হয়েছে প্রায় দশ লাখ টাকা। এই বিশাল এমাউন্টের টাকা জোগার করতে অনেকে নিজের শেষ সম্বল ভিটামাটি বিক্রি করতে হয়।
স্বপ্ন দেখে সিঙ্গাপুর এসে অল্পসময়ে সকল টাকা শোধ করে ফেলবে। দেশে থেকে দালালদের বলা হয় যেন একটি ভালো কোম্পানিতে আইপি লাগানো হয়। দালালরা ভালো কোম্পানি বলে ফুসলিয়ে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে পাঠায় স্বপ্নের দেশ সিঙ্গাপুরে। তাও আবার একবছরের চুক্তিতে। একবছর পরে নতুন করে কন্ট্রাক্ট করে এভাবে ১৮ বছর থাকা যায়। এমনটিই বলে দালালরা। এখানে আসার পর ভালো কোম্পানি বাদ দিয়ে পরিচিত হতে হয় কোম্পানি নিয়ে তিনটি নতুন শব্দ-
Maincon, Subcon, Supply. 
Maincon হলো সেই সব কোম্পানি যারা Government থেকে সরাসরি কাজ নিয়ে Subcon এর মাধ্যমে কাজ করান। Subcon এর যদি লোকের প্রয়োজন হয় তাহলে Suppy কোম্পানি থেকে লোক নিয়ে এসে কাজ করান।
এতে যারা এসে Maincon কোম্পানিতে কাজ করে তাদের বেসিক সেলারি কম হলেও প্রতিবছর ভিসা নবায়ন করতে তেমন চিন্তা করতে হয় না। তবে এখন ভিন্নরূপ। বেশিরভাগ Subcon যদিও ভিসা নবায়ন করেন, এর বিনিময় কর্মী থেকে $1500 থেকে $2000 ডলার নিয়ে যায়। কিছু কিছু আছে ব্যতিক্রম। তাঁরা টাকা ছাড়াই ভিসা নবায়ন করেন।
আবার কিছু কোম্পানি একবছর পরে বাছাই করে লোক পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু Supply কোম্পানিগুলো একবছর পরে কোনো কর্মীর ভিসাই নবায়ন করেন না। প্রতিবছর নতুন করে লোক নিয়ে আসা তাদের একটি ব্যবসা। কোনো কিছুর বিনিময়ে তারা ভিসা নবায়ন করতে রাজি হয় না। 
দিনের পর দিন রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে শুধু একটাই আশা নিয়ে। তা হলো একবছর শেষে ভিসার নবায়ন করানো। কিন্তু সবার ভাগ্যে সেটা হয়ে উঠে না। ঋণের বোঝা আর চোখের জল নিয়ে ফিরে যেতে হয় বাড়ী।
তাহলে ভেবে দেখুন যারা ভিটামাটি বিক্রি করে বা লোন করে স্বপ্ন নিয়ে আসেন। তাদের একবছর পর পাঠিয়ে দিলে তাদের কী অবস্থা হয়?
বেশিরভাগই ১৮ ডলার বেসিকে কাজ করে। প্রতি সপ্তাহে রবিবার বন্ধ। দিনে দুই ঘন্টা ওভারটাইম। আবার শানিবার ওভারটাইম নেই। এতে মাসে শ্রমিকের বেতন আসে ৫০০-৫৫০ ডলার। তার মাঝে একমাসে খাওয়া ও যাবতীয় খরচ চলে যায় ২০০- ২৫০ ডলার। বাকি থাকে ২৫০-৩০০ ডলার। ৩০০ ডলার ধরলে বর্তমানে টাকার রেটে আসে বিশ হাজার থেকেও কম । তাহলে এক বছরে আসে প্রায় ২০০০০০৳।
যেখানে আসতে খরচ হয় প্রায় দশ লক্ষ টাকা। বাকি টাকা জলে যায়। সাথে একবছরে শ্রম। আবার নতুন করে আসতে লেগে যায় প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। যেটা সবার পক্ষে সম্ভব না।
তাই যারা দূর থেকে ভাবছেন সিঙ্গাপুর একটি স্বপ্নের দেশে, তারা এবার ভেবে দেখুন সিঙ্গাপুর আসলে কতটা স্বপ্নের। আসার আগে আরেকবার বসে পড়ুন ক্যালকুলেটর নিয়ে। 
এটা হচ্ছে সম্পূর্ণ বাস্তব এবং সত্য বিশ্বাস টা আপনার কাছে।
(সংগৃহীত)

ভালো থাকুন | School of Awareness

Preface to Flop Investment!


স্কুল অব অ্যাওয়ারনেস এর "ফ্লপ ইনভেস্টমেন্ট" বিভাগে বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠান ও ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগ না করার পরামর্শ পাবেন।